কিশোরগঞ্জ জেলার অন্তর্গত কিশোরগঞ্জ সদর উপজেলার বিন্নাটী গ্রামে কিশোরগঞ্জ-পাকুন্দিয়া মহাসড়কের পাশে সবুজ শ্যামল পরিবেশে বিন্নাটী আব্দুল মজিদ মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয় ১২ জানুয়ারী, ১৯৬৯ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠার পূর্বে শহরের কতিপয় শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছাড়া বিন্নাটী, মারিয়া, চৌদ্দশত ইউনিয়নে মাধ্যমিক পর্যায়ের কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছিল না। অনুন্নত যাতায়াত ব্যবস্থা ও অপ্রতুল যানবাহনের কারণে এলাকার শিক্ষার্থীদের দুরদুরান্তে গিয়ে পড়াশুনা করা ছিল অসম্ভব।
‘শিক্ষাই জাতির মেরুদন্ড’ শিক্ষা ছাড়া কোন জাতি উন্নতি করতে পারে না। শিক্ষা মানব সম্পদ উন্নয়নের প্রধান সোপান। এই উপলব্ধি থেকে বিন্নাটী আব্দুল মজিদ মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতাদ্বয় শিক্ষায় অনগ্রসর ও পশ্চাদপদ জনগোষ্ঠীকে শিক্ষার আলোয় আলোকিত করার মানসে এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় স্থাপন করার প্রয়োজনীয়তা অনুভব করেন। বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা তৎকালীন কিশোরগঞ্জ মহকুমা আওয়ামীলীগের সদস্য শহীদ আহাম্মদ মোল্লা যিনি ১৩/১০/১৯৭১ সালে পাক হানাদার বাহিনী কর্তৃক নির্মমভাবে শহীদ হন এবং বিদ্যালয়ের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা ও তাঁর স্নেহধন্য ছোট ভাই তৎকালীন বিন্নাটী ইউনিয়নের দুইবারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান জনাব আব্দুল বারী মোল্লা, বিশিষ্ট সমাজ সেবক জনাব মোসলেহ উদ্দিন আহম্মদ এবং এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সাথে বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার বিষয়ে আলোচনা করেন। এলাকায় একটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম এঁর পরামর্শ, সহযোগীতা ও সার্বিক নির্দেশনায় বিদ্যালয় স্থাপনের চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
শহীদ আহম্মদ মোল্লা ও আব্দুল বারী মোল্লা বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য ৩ (তিন) একর জমি দান করেন। তাঁদের শ্রদ্ধেয় পিতা মরহুম আব্দুল মজিদ মোল্লার নামে নামকরণ করার প্রস্তাব করলে উপস্থিত এলাকার গন্যমান্য ব্যাক্তিবর্গ তাদের এই মহৎ প্রস্তাবকে স্বানন্দে গ্রহণ করেন। মরহুম আব্দুল মজিদ মোল্লা এবং বিন্নাটী গ্রামের নামের মিশেলে বিন্নাটী আব্দুল মজিদ মোল্লা উচ্চ বিদ্যালয় নামকরণ করা হয়।
বিদ্যালয় পরিচালনার জন্য এলাকার গণ্যমান্য ব্যাক্তিবর্গের সিদ্ধান্তক্রমে শহীদ আহাম্মদ মোল্লাকে সভাপতি, মোঃ খুরশিদ উদ্দিনকে সম্পাদক এবং বাবু জগদ্বীপ চক্রবর্ত্তীকে প্রধান শিক্ষক করে ০৭ সদস্য বিশিষ্ঠ একটি পরিচালনা পরিষদ গঠিত হয়। পরিচালনা পরিষদের অন্যান্য সদস্যবৃন্দ হলেন জনাব মোসলেহ উদ্দিন আহমেদ, জনাব শেখ রুস্তম আলী, জনাব মোঃ নুরুল হক, বাবু হেমচন্দ্র চক্রবর্তী। পরবর্তী সময়ে ১২/০১/১৯৬৯খ্রিস্টাব্দে ১০৬ জন শিক্ষার্থী নিয়ে বিদ্যালয়ের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করা হয়।
বিদ্যালয়ের তৎকালীন প্রধান শিক্ষক মুহা. আবদুর রহমানের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২১/০৪/১৯৭২ সনে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা বোর্ড, ঢাকা কর্তৃক মানবিক বিভাগে প্রথম স্বীকৃতি প্রাপ্ত হয়। পরবর্তীতে বিজ্ঞান ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের স্বীকৃতি পায়। কিশোরগঞ্জের বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী ও জমিদার শ্রী বিরাজ মোহন রায় ১৯৮৪ সালে ১.০১ একর জমি দান করায় অত্র বিদ্যালয়ের মোট জমির পরিমান দাড়ায় ৪.০১ একর। মোল্লা বাড়ির বিশিষ্ট শিক্ষানুরাগী মোল্লা মেহেদী হাসান প্লাবন ২০২০ সালে বিদ্যালয়ের উন্নয়নমূলক কাজে এককালীন ২ লক্ষ টাকা দান করে আজীবন দাতা সদস্য হন।